বাস্তবতার উপর ভিত্তি করে তৈরি কথোপকথন
লিখেছেনঃ সারোয়ার আলম
সাজিয়েছেঃ আবিদ হাসান
রাশিয়া-ইউক্রেন দ্বন্দ্ব! |
ইউক্রেনঃ রাশিয়া আমার সীমান্তে ১ লাখ সৈন্য মোতায়েন করেছে।
আমেরিকা ও ন্যাটোঃ আরে নাহ এগুলো রাশিয়ার ধাপ্পাবাজি।
ইউক্রেনঃ রাশিয়া এক লাখেরও বেশি সৈন্য আমাদের সীমান্তের কাছাকাছি চলে এসেছে।
আমেরিকা ও ন্যাটোঃ আমরা তো আছি ভয় পেয়না।
ইউক্রেনঃ রাশিয়া আক্রমণ করলে আমার প্রতিহত করার মত শক্তি নেই আমাকে বাঁচাতে ন্যাটোর সদস্য করে নেও।
আমেরিকা ও ন্যাটোঃ নিব নিব সবুর করো, সবুরে মেওয়া ফলে।
ইউক্রেনঃ আচ্ছা তাহলে আমি নিশ্চিন্ত থাকি, জনগণকে তাদের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে বলি!
আমেরিকা ও ন্যাটোঃ রাশিয়া আগামী কিছুদিনের মধ্যেই ইউক্রেনে আক্রমণ করবে!
ইউক্রেনঃ আপনারা না বলছিলেন কিছুই হবে না। এবার আমার তাহলে কি হবে?
আমেরিকা ও ন্যাটোঃ আরে ভয়ের কিছু নেই রাশিয়া আক্রমণ করলে আমরা তার খবর করে ছাড়বো।
আমেরিকা আর ন্যাটো যার পাশে আছে তার কি ভয় লাগার কথা |
ইউক্রেনঃ যাক একটু শান্তি পেলাম। কিন্তু রাশিয়াকে আটকাবেন কিভাবে?
আমেরিকা ও ন্যাটোঃ পুরো ন্যাটো তোমার পাশে আছে ইউক্রেন তোমার ভয় নেই।
ইউক্রেনঃ চমৎকারই ধন্যবাদ। তাহলে এবার ন্যাটোর অস্ত্র এবং সেনা পাঠাবেন ইউক্রেনে, তাই না?
আমেরিকা ও ন্যাটোঃ না। আমরা ইউক্রেনে ন্যাটোর কোন সেনা বা অস্ত্র পাঠাবো না। কারণ তুমি ন্যাটোর সদস্য না।
ইউক্রেনঃ তাহলে আমাকে ন্যাটোর সদস্য করে নিন।
আমেরিকা ও ন্যাটোঃ ধীরে বাপু ধীরে। সবুরে মেওয়া ফলে।
ইউক্রেনঃ কিন্তু ততদিনে রাশিয়া তো আমাকে দখল করে নিবে?
আমেরিকা ও ন্যাটোঃ দখল করলে আমরা রাশিয়াকে ধ্বংস করে দেব?
ইউক্রেনঃ কিভাবে?
আমেরিকা ও ন্যাটোঃ নিষেধাজ্ঞা দিয়ে।
ইউক্রেনঃ তাহলে আক্রমণের আগেই নিষেধাজ্ঞা দেয়া শুরু করুন যেন আক্রমণ করার সাহস না পায়।
আমেরিকা ও ন্যাটোঃ না না, আগে আক্রমণ করুক। আমরা আক্রমণের ধরণ দেখে তারপর নিষেধাজ্ঞা দিবো।
ইউক্রেনঃ কিন্তু ততদিনে তো আমি শেষ হয়ে যাবো।
আমেরিকা ও ন্যাটোঃ আচ্ছা ঠিক আছে, আমরা কিছু ন্যাটো সদস্য সৈন্য এবং অস্ত্র পাঠাবে।
ইউক্রেনঃ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।
কিছুদিন পর
আমেরিকা ও ন্যাটোঃ রাশিয়া যেকোনো মুহূর্তে ইউক্রেনে আক্রমণ করবে?
ইউক্রেনঃ হতব্বিহল। কী বলছেন এগুলো।
আমেরিকা ও ন্যাটোঃ হা যেকোনো সময়ই আক্রমণ করবে।
ইউক্রেনঃ আমি তাহলে কি করবো?
আমেরিকা ও ন্যাটোঃ সব আমেরিকান সৈন্য, ডিপ্লোম্যাট, নাগরিক এক্ষণই ইউক্রেন ছাড়ো।
ইউক্রেনঃ আমার কি হবে তাহলে? আমাকে অস্ত্র দিবেন না?
আমেরিকা ও ন্যাটোঃ এই মুহূর্তে ইউক্রেন নিরাপদ না, রাশিয়া যে কোন সময় আক্রমণ করতে পারে। সব ন্যাটো সদস্যদেশ দূতাবাস খালি করো।
ইউক্রেনঃ এগুলো কি বলছেন? আপনারা না আমাকে সহযোগিতা করবেন? আমার পাশে আছেন?
আমেরিকা ও ন্যাটোঃ হ্যাঁ পাশেই তো আছি। তোমার প্রতিবেশী ন্যাটোর সদস্য দেশে কয়েকজন অতিরিক্ত সেনা পাঠাচ্ছি আর কিছু অস্ত্র পাঠাচ্ছি। আমরা ওখান থেকেই তোমার পাশে আছি।
ইউক্রেনঃ তাতে আমার কি লাভ?
আমেরিকা ও ন্যাটোঃ এতে করে রাশিয়া তোমাকে আক্রমণ করতে সাহস পাবে না।
ইউক্রেনঃ আমার দেশের মধ্যে ন্যাটো সৈন্য থাকলে আরও ভালো হতো না? তাতে রাশিয়া আক্রমণ করতে ভয় পেত?
আমেরিকা ও ন্যাটোঃ তুমি তো ন্যাটো সদস্য না।
ইউক্রেনঃ তাহলে আমাকে ন্যাটো সদস্য করে নিন।
আমেরিকা ও ন্যাটোঃ সবুর করো। সবুরে মেওয়া ফলে।
ইউক্রেনঃ (রেগে গিয়ে) আমি এই যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা আর চাই না। এতে আমার দেশের লোকজন প্রতিদিন উৎকণ্ঠায় কাটায়। তাদের মনে শান্তি নেই। দেশের ধনীরা সব দেশ ছেড়ে পালাচ্ছে। এমপিরা দেশ ছেড়ে পালাচ্ছে। মানুষের মধ্যে ভীতি বাড়ছে।
আমেরিকা ও ন্যাটোঃ আরে এটা আমাদের একটা কৌশল রাশিয়ার বিরুদ্ধে। এভাবে যদি বলতে থাকি "পুতিন এক্ষণই আক্রমণ করবে" পুতিন এক্ষণই আক্রমণ করবে" তাহলে পুতিন আর আক্রমণ করতে সাহস পাবে না।
ইউক্রেনঃ কিন্তু তাতে তো আমাদের বারোটা বেজে যাচ্ছে। আর পুতিনও তো বলছে না যে সে আক্রমণ করবে।
আমেরিকা ও ন্যাটোঃ এটাই যুদ্ধের কৌশল। তুমি যুদ্ধের কিছু বুঝো?
ইউক্রেনঃ আমি যুদ্ধের কিছুই বুঝি না? আচ্ছা, ইউরোপের কোন লিডার তার দেশের কোন অংশে গুলির আওয়াজ আর বোমার শব্দ শুনেছে? প্রতিদিন বোমার শব্দের মধ্যে উৎকণ্ঠায় দিন কাটিয়েছে?
আমেরিকা ও ন্যাটোঃ না।
ইউক্রেনঃ প্রতিদিন সৈন্য নিহত হওয়ার খবর দিয়ে ঘুম ভাঙ্গে আপনাদের?
আমেরিকা ও ন্যাটোঃ না।
ইউক্রেনঃ যুদ্ধে নিহত হওয়া কোন না কোন লোকের পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে প্রতিদিন তাদের বাসায় যেতে হয় আপনাদেরকে?
আমেরিকা ও ন্যাটোঃ না।
ইউক্রেনঃ তাহলে বন্ধ করুন এই যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা।
কিছুদিন পর
রাশিয়াঃ ইউক্রেন আমার ভূমিতে হামলা করেছে।এর প্রতিশোধ নিবো?
আমেরিকা ও ন্যাটোঃ সবাই ইউক্রেন ছাড়ো। যে যেভাবে পারো পালাও!
রাশিয়াঃ সৈন্য সামন্ত, আক্রমণের জন্য প্রস্তুত হও!
আমেরিকা ও ন্যাটোঃ পালাও! পালাও! ইউক্রেন ছেড়ে পালাও!
ইউক্রেনঃ কাঁদছে আর মনের কষ্টে গান গাইছে।
"আমি কুলহারা কলঙ্কিনী,
আমারে কেউ ছুঁইয়ো না গো সজনী"
প্রেম করে প্রাণবন্ধুর (আমেরিকা আর ন্যাটোর) সনে
যে দুঃখ পেয়েছি মনে
আমার কেঁদে যায় দিন-রজনী
আমারে কেউ ছুঁইয়ো না গো সজনী
আমি কুলহারা কলঙ্কিনী"