গুগলের জানা অজানা নানাদিক

লেখকঃ Black Explorer

গুগলের জানা অজানা নানাদিক
গুগলের বিস্তারিত

গুগল নামটি খুবই পরিচিত। গুগল সম্পর্কে না জানা লোকের সংখ্যা খুব কম। অনেক সময় আমরা কোন বন্ধুকে কোন কিছু জিজ্ঞেস করলে উত্তর আসে "গুগলে সার্চ কর তাইনা? গুগল ছাড়া লাইফ ইম্পসিবল! ঠিক তাই! আমাদের প্রতাহিক জীবনে গুগল এখন একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ আমরা অনেক সময় বলে থাকি, আমার স্কুল, কলেজ বা ইউনিভার্সিটির দরকার নেই, আমার আছে গুগল! তা বলার কারণ একটিই, গুগল যখন হাতের কাছে, তখন অজানা যা কিছু আছে তা সম্পর্কে জানতে গুগলের কোন বিকল্প নেই। কারন, গুগল অন্যসব সার্চ ইঞ্জিনের চেয়ে অনেক আলাদা। গুগল সম্পর্কে আমাদের ধারণা কিন্তু সবাই বলবেন, গুগল একটি সার্চ ইঞ্জিন। কিন্তু আসলে কি তাই? না! যদি তাই হত তাহলে আমার লেখার শিরোনামই মিথ্যা হয়ে যায়। আসলে গুগল একটি সার্চ ইঞ্জিন ঠিক আছে। কিন্তু এটি শুধুই একটি সার্চ ইঞ্জিন নয়- আরো অনেক কিছু। তাই এই লেখার অবতারনা। আমরা অনেকেই জানিনা, কিভাবে গুগল কাজ করে? কিভাবে মাত্র দুয়েক সেকেন্ডে সারা দুনিয়ার তথ্য | আমাদের সামনে উপস্থাপন করে, গুগলের কোন সেবা কি কাজে লাগে, বা আমরা নামও শুনিনি এছাড়া নতুন নতুন সার্ভিস এসেছে ওই গুলো সম্পর্কে ও আমরা অনেকেই জানি না। আমি আপনারদের গুগল সম্পর্কে আপনার অনেক অজানা, চমকপ্রদ এবং খুটি নাটি তথ্য জানাব।


গুগল এখন কোটি কোটি মানুষের ভরসা। কিন্তু এই একটি সার্চ ইঞ্জিনের কি এমন জাদুকরী জিনিষ আছে যে আজ বিনা বাক্যে সবাই গুগলকে সেরা মানছে? কি কারনে আজ গুগল সবার কাছে এমন বিশ্বস্তৃতা অর্জন করল? তার প্রথম কারন গুগলের নির্ঝঞ্ঝাট, সুন্দর ইন্টারফেস, সার্চ করা খুব সহজ,। অন্যসব সার্চ ইঞ্জিনের তুলনায় গুগলের আছে নির্ভরযোগ্য ইনডেজ। যা এই বিশাল এলাকা জুড়ে অনুসন্ধান করে সব চেয়ে সঠিক আর প্রাসঙ্গিক তথ্যটি আমাদের সামনে তুলে ধরে, অপ্রাসঙ্গিক তথ্য নয়। গুগলের | অসাধারণ টেকনোলজি, আর অসাধারণ সব সেবা, যার সবগুলোই ফ্রি, যার কারণে গুগল শুধুই এইটি সার্চ ইঞ্জিন নয়। আর সব চাইতে বড় কথা হলো গুগলের পারফর্মেন্স আমাদের সবাইকে বাধ্য করে তাকে দেয়া বলতে। 


অন্য দশটা সার্চ ইঞ্জিনের তুলনায় গুগলের পারফর্মেন্স আর চমকপ্রদ ব্যাবহার গুগলকে নিয়ে গেছে। কাতারে, যেখানে ভিড়তে পারেনি অন্যরা। भয় প্রত্যেকটি সার্ভিস চোখ ধাঁধানো। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্যঃ গুগল সার্চ ইঞ্জিন গুগল ক্রোম, ট্রান্সলেট, গুগল টক, গুগল এডসেন্স, পিকাসা, গুগল ডেস্কটপ, গুগল রিডার, স্কাই, গুগল সাইট, জিমেইল, ইউটিউব, গুগল আর্থ, গুগল ম্যাপ, গুগল এডওয়ার্ডস, গুগল ক্যালেন্ডার, ব্লগার, গুগল বুকস, ভেসআপ, গুগল ড্রাইভ, গুগল পাস, গুগল ফ্রেন্ড কানেক্ট, গুগলে ল্যাটিচুড, গুগল মার্স, গুগল প্লে, এন্ড্রয়েড, গুগল মুন, গুগল ফাস্ট ক্লিপ, গেজেট, স্ট্রিট ভিউ, গুগল ডকস, গুগল সার্টলিংক+++


এগুলো সবই গুগলের সার্ভিস। আর এই সার্চ ইঞ্জিনটি কখনই ইউজারদের সাথে বেইমানী করেনি। অন্য সার্চ ইঞ্জিন গুলো যেখানে টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন পোর্টাল, বিজ্ঞাপন, সার্চের প্রথমে স্থান দেওয়া সহ নানা বাণিজ্যিক সমীকরনে নিজেরদের বিলিয়ে দিয়েছে। কিন্তু ইউজারদের কাছে কখনই খোলাশা করে বলেনি, সার্চকৃত সাইটের প্রথমে স্থান পাওয়া কোন সাইটটি বাণিজ্যিক ভিত্তিতে প্রথমে স্থান দেওয়া হয়েছে। সুতরাং ইউজার আসলে বুঝতেই পারেনা, তার সার্চকৃত সাইটটি কেন প্রথম পেজে নেই। অনেক সময় ইউজাররা তাদের সার্চকৃত সাইট খুঁজেই পায় না। সেখানে গুগল ব্যতিক্রম। গুগল ও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সাইট ইনডেজ করে, কিন্তু তারা লিখেই দেয়, কোনটি স্পনসর এড। গুগল তার ইন্ডেছি এমনভাবে করে, যাতে শুধুমাত্র সার্চকৃত বিষয় উঠে আসে, অপ্রাসঙ্গিক কিছু না আসে। এছাড়া গুগলের আছে সার্চ করার কিছু টেকনিক, যাতে শুধুমাত্র সার্চকৃত বিষয় উঠে আসে। এছাড়া আছে এডভাপড় ফিল্টারিং। এ সব ব্যবহার করলে সার্চ আরও নিখুঁত হয়। 

এছাড়া অনেক সময় আমরা যে সাইটটি খুঁজি তা হয়ত ওই মুহূর্তে পাওয়া যাচ্ছে না, বা এমনও হতে পারে সাইটের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে। তাই বলে কি আমরা তথ্য পাবনা? পাবেন। গুগল তার Cache তে সংরক্ষন করে থাকে। এজন্য গুগলের Cache লিংকে গেলে গুগলের ডাটাবেস থেকে সাইটের তথ্য পাওয়া যাবে।


সংক্ষিপ্ত ইতিহাসঃ

স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন ছাত্র ল্যারি পেজ এবং সার্গেই ব্রিন গুগলের প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৬৬ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যা লয়ের দুজন পিএইচডি কোর্সের ছাত্র ল্যারি পেজ এবং সার্গেই ব্রিন এর কাজ শুরুকরেন। তাদের তত্ত্ব ছিল তখনকার কৌশলগুলোর চেয়ে নতুন কৌশলে কোন একটা সার্চ ইঞ্জিন যদি বানানো হয়, যেটি ওয়েবসাইটগুলোর মধ্যেকার পারস্পরিক সম্পর্ক থেকে যদি ফলাফল বের করা যায় তাহলে আরো ভাল ফলাফল পাওয়া যাবে। ১৯৯৮ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ল্যারি পেজ এবং সার্গেই ব্রিন একটি প্রাইভেট লিমিটেড হিসেবে গুগল প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০৪ সালের ১৯ আগস্ট এটি পাবলিক লিমিটেডে রূপান্তরিত হয়। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন সেবা, আর পণ্য দিয়ে গুগল সবাইকে তাক লাগিয়ে দিচ্ছে। আর হয়ে যাচ্ছে মানুষের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। গুগলের প্রধান কার্যালয় ক্যালিফোর্নিয়ার মাউন্টেইন ভিউ" নামক শহরে। এর মূলমন্ত্র হচ্ছে-"বিশ্বের তথ্য সন্নিবেশিত করে তাকে সবার জন্য সহজলভ্য করে দেয়া। আর এর প্রাতিষ্ঠানিক মূলমন্ত্র হচ্ছে-"Don't be evil"


নামকরণঃ

গুগলের নাম করণ নিয়ে আছে মজার কাহিনি। গুগল প্রতিষ্ঠা কালে এর নাম রাখা হয়েছিল Googol. যার অর্থ হল সব চেয়ে বড় নাম্বার, মানে 10 to the power 100 কিন্তু এই ব্র্যান্ড নামটি টি রেজিস্ট্রেশনের সময় শেন এন্ডারসন স্পেলিং মিসটেক করে Googol এর পরিবর্তে Google টাইপ করেন, আর ১ ঘন্টার মধ্যে তা এই নামেই রেজিস্টারড হয়ে যায়, এবং পরবর্তীতে এটা আর পরিবর্তনও করা হয় নি। এনিয়ে দুই জন খুব বিষয় ছিলেন। এভাবেই চলতে থাকে এবং এটাই এখন পেলিং মিসটেক এর ক্ষেত্রে একটি বড় মিসটেক এবং বড় ইতিহাসও। বর্তমানে গুগলের গুরুত্ব বিবেচনা করে তা ইংরেজি শব্দকোষে অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে। গানিতিক Google থেকে নেওয়া হয়েছে। যার অর্থ হলো একের পরে ১০০ টি শূণ্য দিলে যা হয়। অর্থাৎ

তারা ইন্টারনেটের বিশাল তথ্য ভান্ডারের বিশ্বলতাকে একসাথে এনে দেওয়ার কাজটি শুরু করেছে এই নাম দিয়ে। তাই নতুন নতুন অনেক সার্ভিসই শুরু হচ্ছে এই নাম দিয়ে থেকে। (তথ্যসুত্রঃ উইকিপিডিয়া, গার্ডিয়ান)।


গুগলের ব্যবহারঃ

গুগলের আছে হাজার রকম ব্যবহার। আজ আমরা বেসিক কয়েকটি ব্যবহার দেখব যা হয়ত অনেকেই জানেন না। আজ আমরা গুগলের বেসিক কিছু ব্যবহার সম্পর্কে জানবো।

ক্যালকুলেটরঃ

ধরুন আপনি ইন্টারনেটে বসে কাজ করছেন। হঠাৎ আপনার কোন হিসাব করার দরকার হল। আবার সাথে ক্যালকুলেটরও নেই! কোন চিন্তা নেই। আপনি এই কাজে ব্যবহার করতে পারেন গুগলকে। এজন্য আপনি গুগলের সার্চ বারে টাইপ করুন যা করতে চান। ধরুন আমি ১৩০০০ কে | ১০ দিয়ে ভাগ করব। এজন্য লিখতে হবে ৯৩০০০/১০

এর পর এন্টার করুন। দেখবেন আপনার কাঙ্ক্ষিত ফলাফল এসেছে।

এভাবে আপনি আপনার হিসাবের কাজ করতে পারবেন। আপনি চাইলে আরও ফাংশন ব্যবহার করতে পারেন। যেমন আমরা যদি জানতে চাই sin 1 এর মান কত? তাহলে সার্চ বারে টাইপ করুন, sin (0) এর পর এন্টার করুন, তাহলে আপনাকে ফলাফল দেখাবে = 0, আবার যদি জানতে চান পড়ও এর মান কত? তাহলে আগের মতই সার্চ বারে টাইপ করুন cos (0) তার পর এন্টার করুন। দেখবেন ফলাফল দেখাচ্ছে 1, এভাবে আপনি স্কয়ার এবং রুটের মানও বহার করতে পারবেন।

অবিধান হিসেবেঃ

গুগলকে আপনি অভিধান হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন। এজন্য আপন কে আপনার প্রয়োজনীয় শব্দের আগে define উল্লেখ করতে হবে। ধরুন আমি জানতে চাই, protect সম্পর্কে তাহলে লিখব define:protect.

গান খুজুনঃ

বিভিন্ন ফরম্যাট এ গান খুঁজে বের করুন গুগল থেকে। পছন্দের গান খুঁজে বের করতে এই টিপস টি বেশ কাজের। ধরুন আপনি এল আরবির দের গান খুঁজছেন। তাহলে গুগল এ লিখুন intitle:index of (mp3|mp4|avi) LRB তারপর দেখুন LRB গানের বিশাল লিস্ট। তারপর যদি আপনার বিশেষ কোন গান লাগলে, মনে করুন জেমস এর বাংলাদেশ গান টা লাগবে। তাহলে এইভাবে লিখুন index of (mp3|mp4|avi) bangladesh james । এছাড়া একটু ওলট পালট করলেও অনেক তথ্য পাবেন।

ট্রান্সলেটঃ

Translate লিখে কোন শব্দ। যেমনঃ translate Rock লিখে সার্চ দিলে সবচেয়ে কাছের ম্যাচ করা শব্দটি গুগল ভাষান্তর করে নেবে।

সফটওয়্যারের ফুল ভার্সন পেতেঃ

আমাদের অনেক সময় কোন সফটওয়াররের ফুল ভার্সন লাগে। এক্ষেত্রে গুগলকে ব্যবহার করতে পারেন। এজন্য আপনাকে একটি কোড ব্যবহার করতে হবে। 94FBRধরুন, আমি চাই, আমার এভাস্ট এন্টিভাইরাসের ফুল ভার্সন। তাহলে লিখতে হবে avast 94fbr দেখবেন আপনার প্রয়োজনীয় কী দেখাচ্ছে।

মুদ্রার মান জানুনঃ

যদি এক দেশের মুদ্রা কে অন্য দেশের মুদ্রায় কনর্ভাট করে মূল্য দেখতে চান, তবে সেটাও সম্ভব। যেমন- আপনি জানতে চাচ্ছেন, দশ মার্কিন ডলারে কত ইউরো? তাহলে গুগলের সার্চ বারে আপনাকে লিখতে হবে 10 usd in euro, তাহলেই পেয়ে যাবেন আপনার প্রয়োজনীয় তথ্য।

সমার্থক শব্দ খুঁজুনঃ

অনেক সময় আমাদের অনেক শব্দের সমার্থক শব্দ জানার দরকার হয়। এজন্য আপনআরা গুগলের সাহায্য নিতে পারেন। এজন্য যে শব্দটি জানতে চান, শব্দটির পূর্বে টিল্ড চিহ্ন (~) লিখুন। সার্চ বারে যেভাবে লিখবেন: ~ শব্দ

উদাহরণঃ ~ Attack.

ইউনিট কনভার্সন করুনঃ

আপনি উচ্চতার পরিমাপ, ওজন, এবং অনেকের মধ্যে ভলিউম বিভিন্ন ইউনিটের মধ্যে রূপান্তর করতে গুগল ব্যবহার করতে পারেন। এজন্য সার্চ বক্সে কাঙ্ক্ষিত রূপান্তর লিখুন। সার্চ বারে যেভাবে লিখবেন: kg in pound

উদাহরণ:

10.5cm in inches

Inch in feet

Sec in ms 

Kilobyte in byte.

স্থানীয় সময় জানুনঃ

বিশ্বের যে কোন স্থানের সময় জানতে পারেন গুগলের সাহায্যে। এজন্য প্রয়োজনীয় স্থানের পূর্বে time শব্দটি লিখুন। সার্চ বারে যেভাবে লিখবেন: time PLACE যেমন time Dhaka.

স্থানীয় আবহাওয়ার অবস্থা জানুনঃ

বিশ্বের যে কোন শহরের জন্য স্থানীয় আবহাওয়া দেখতে গুগলকে ব্যবহার করতে পারেন। এজন্য শহর বা রাজ্যের নামের পূর্বে “weather" শব্দটি লিখুন। 

সার্চ বারে যেভাবে লিখবেন: weather Dhaka.


আজ এটুকুই, সামনে গুগলের জনপ্রিয় সেবাগুলো নিয়ে ডিটেইলস আলোচনা এবং আরও অনেক মজার মজার তথ্য নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হবো। সবাই অনেক ভাল থাকবেন।

[বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ প্রতিবেদনটি বাংলাদেশ ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকারস এর ম্যাগাজিন The Black Heat থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে]

Previous Post Next Post