রাজনৈতিক সভায় বক্তব্য রাখছেন ইমরান খান |
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন,
তিনি জাতি গঠনের মহান উদ্দেশ্য নিয়েই রাজনীতিতে যোগ দিয়েছেন, আলু-টমোটোর মতো নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে কাজ করার জন্য নয়।
রোববার পাঞ্জাবের হাফিজাবাদের এক জনসভায় বক্তব্য দানকালে তিনি বলেন,
একটি জাতি গঠিত হয় তার আদর্শের ওপর ভিত্তি করে।আমার রাজনীতিতে আসার উদ্দেশ্যই হলো জাতিকে গড়ে তোলা, বিশেষত পাকিস্তানের প্রকৃত আদর্শের আলোকে তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে নেয়া- যে আদর্শের নির্দেশনা দিয়েছিলেন পাকিস্তানের স্বপ্নদ্রষ্টা কবি আল্লামা ইকবাল।'কোনো জাতি তাদের মাতৃভূমি প্রতিষ্ঠার পেছনে থাকা আদর্শকে বাদ দিয়ে জাতি হিসেবে দাঁড়াতে পারে না বরং প্রতিনিয়ত সে বিস্মৃতির অন্তরালে ডুবে যেতে থাকে।’
পাকিস্তানিদের একটি মহান জাতি হিসেবে গড়ে তোলার জন্য রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলেন দাবি করে প্রধানমন্ত্রী খান বলেন,
তিনি যুবসমাজের মধ্যে বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সা.)-এর শিক্ষা ছড়িয়ে দেয়ার জন্য ‘রাহমাতুল-লিল-আলামিন’ সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেছেন।'এছাড়া সকল তরুণ ছাত্রছাত্রীরা ও ধর্মীয় অঙ্গনে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা যাতে একই পাঠ্যক্রম অধ্যয়ন করে এবং জীবনে প্রতিযোগিতা ও দক্ষতা অর্জনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড পায়- তা নিশ্চিত করার জন্য তার সরকার এককেন্দ্রিক জাতীয় পাঠ্যক্রম চালু করেছে।''সরকার ২.৬ মিলিয়ন স্কলারশিপও চালু করেছে। একটি মহাকাশ বিশ্ববিদ্যালয়সহ দুটি সর্বশেষ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে যাতে পাকিস্তান নিজেই ভবিষ্যতে বিমান তৈরি করতে পারে। ‘গত ৭০ বছরে কেউ এ ক্ষেত্রগুলো নিয়ে ভাবেনি,’ জোর দিয়ে বলেন তিনি।'
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি বিভিন্ন বিদেশী মিশনের প্রধানদের দেয়া যৌথ চিঠির ব্যাপারে তার তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। গত সাড়ে তিন বছরে তার সরকারের অর্জন বর্ণনা ছাড়াও তার ভাষণে বিরোধী নেতাদের কঠোর সমালোচনা করেছেন তিনি। দেশে ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির কারণে অর্থনীতির অব্যবস্থাপনার অভিযোগ তুলে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে একের পর এক আক্রমণ করছিলেন বিরোধী রাজনীতিরা। মুদ্রাস্ফীতি, মূল্যবৃদ্ধির ইস্যুতে বিরোধীদের আক্রমণের ব্যাপারে অবশেষে মুখ খোলেন ইমরান।
একইসাথে প্রধানমন্ত্রী সংসদে তার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করার বিষয়ে বিরোধী দলগুলোকে আক্রমণ করে তিনি বলেন,
টাকা ব্যবহার করে যারা সংসদের সদস্যদের কেনার চেষ্টা করছে ও সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা করছে, তাদের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে রুখে দাঁড়াবে দেশের মানুষ ৷
পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ, পাকিস্তান পিপলস পার্টি ও জমিয়ত উলেমা-ই-ইসলাম (ফজল) দলগুলোর নেতাদের তীব্র সমালোচনা করেন ইমরান। ইমরানের তেহরিক-এ ইনসাফ পার্টিকে ক্ষমতাচ্যুত করতে তারা একাট্টা হয়েছে বলে অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী খান বলেন যে,
‘যখন আমি ইইউ রাষ্ট্রদূতদের সমালোচনা করি, তখন তিন বিরোধী নেতাই আমাকে কঠোর বক্তব্যের জন্য দোষারোপ করতে শুরু করেন।’
প্রধানমন্ত্রী ভারত কর্তৃক ‘ভুলবশত’ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের কথাও উল্লেখ করে বলেন যে,
পাকিস্তান সরকার খুব হিসেব করে তাদের জবাব দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানের সীমানা রক্ষা করার এবং সঠিক পথে চলার সব ক্ষমতা আছে।’
তিনি তার সরকারের নেয়া অন্যান্য পদক্ষেপের বর্ণনা দিয়ে বলেন,
'স্বল্প আয়ের পরিবারগুলিতে স্বাস্থ্য বীমা কার্ডের প্রবর্তন, আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন, কামিয়াব পাকিস্তান কর্মসূচি, এহসাস রেশন স্কিম, করোনভাইরাস মহামারী ব্যবস্থাপনা, রাজস্ব আদায়ের রেকর্ড, পেট্রোল ও বিদ্যুতের ইউনিটের দাম হ্রাস এবং জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।''পাকিস্তান তার মেয়াদের অবশিষ্ট সময়ে একটি মহান দেশ হয়ে উঠতে চলেছে এবং সরকার ঘোষিত প্রণোদনাগুলি শিগগিরই ফলাফল দেবে বলে তিনি আশাবাদী।'
ক্রিকেটার-রাজনীতিবিদ ইমরান খান বলেন,
২৫ বছর আগে তিনি দেশের তরুণদের স্বার্থে রাজনীতিতে যোগদান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। নিজের কোনো ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য নয়। কারণ ইতিমধ্যেই জীবনের সমস্ত কিছু তিনি পেয়েছেন, যা নিয়ে এক ব্যক্তি স্বপ্ন দেখতে পারে।‘আমি দেশের তরুণদের স্বার্থে এতে যোগ দিয়েছিলাম। আমরা যদি একটি মহান জাতি হতে চাই, তাহলে আমাদের সত্যকে সমর্থন করতে হবে এবং এটাই আমি গত ২৫ বছর ধরে প্রচার করে আসছি।’'একটি জাতি কখনোই উঠতে পারে না যতক্ষণ না সে নিজেকে সম্মান করে। তিনি আরো যোগ করেন যে, জনগণকে হতাশ না করাও জাতির একজন নেতার দায়িত্ব।'
[বিদ্রুপঃ তথ্যটি সংগ্রহ করা হয়েছে পাকিস্তানের সংবাদ "ডন" থেকে]