আরব-ইউক্রেন শরণার্থী |
আজ থেকে ১০ বছর আগে যুদ্ধ বিধ্বস্ত সিরিয়া ছেড়ে পালিয়েছিলেন সে দেশের নাগরিক আহমেদ আল-হারিরি। লেবাননে আশ্রয় নেওয়া হারিরি ১০ বছর ধরে চেষ্টা করে যাচ্ছেন ইউরোপের কোনো দেশে পাড়ি জমিয়ে নতুন জীবন গড়ার।
অন্যদিকে রুশ অভিযানের সপ্তাহ না পেরুতেই ইউক্রেনে নাগরিকদের জন্য ইউরোপীয় দেশগুলো যেভাবে নিজ নিজ দেশের দ্বার উন্মোচন করে দিয়েছে, তার সঙ্গে নিজেদের ভাগ্যকে কিছুতেই মেলাতে পারছেন না তিন সন্তানের জনক হারিরি। ভূমধ্যসাগরীয় শজর সিডনের একটি শরণার্থী শিবির থেকে তিনি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন,
আমরা অবাক হচ্ছি এটা ভেবে যে কেন ইউক্রেনীয়দের স্বাগত জানাচ্ছে যখন আমরা, সিরিয়ান শরণার্থীরা, এখনও তাঁবুতে রয়েছি এবং বরফের মধ্যে রয়েছি। মৃত্যুর মুখোমুখি দিন কাটছে আমাদের। কিন্ত আমাদের দিকে কেউ ফিরে তাকাচ্ছে না?
যুদ্ধের কারণে আরব বিশ্বের ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ বাস্তুহারা হয়েছে। ২০১৫ সালে সিরিয়া ও অন্যান্য অঞ্চলের শরণার্থীদের আটকাতে ইউরোপের যে ভূমিকা ছিল, ইউক্রেনের ক্ষেত্রে তা সম্পূর্ণ বিপরীত। হারিরি থেকে শুরু করে কার্টুনিস্ট ও আন্দোলনকর্মীরা এ নিয়ে সমালোচনা শুরু করেছে।
অনেকেই ইউরোপে পাড়ি জামাতে গিয়ে আরব শরণার্থীদের নিজের পর দিন ধরে প্রতিকূল আবহাওয়ায় হেঁটে যাওয়া কিংবা উত্তাল সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে প্রাণ হারানোর ঘটনা স্মরণ করেছে। রাশিয়ার হামলার চারদিন পরই কমপক্ষে চার লাখ শরণার্থী ইউক্রেন থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) চার দেশে প্রবেশ করেছে বলে ইইউ জানিয়েছে।
আরও লাখ লাখ ইউক্রেনীয় শরণার্থী ইউরোপের দেশগুলোতে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এসব ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের অস্থায়ী বাসস্থানের অনুমতি দেওয়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থান এবং সামাজিক কল্যাণের বিষয়েও প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে ইইউ। ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের জন্য যেভাবে দুয়ার খুলেছে এই দেশগুলো তা কিন্তু সিরিয়ান কিংবা অন্য কারো ক্ষেত্রে দেখা যায়নি।
সিরিয়ার সংঘাত শুরু হওয়ার ১০ বছর পরে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে ২০২১ সালের শুরুর দিকে ইইউভুক্ত দেশগুলো ১০ লাখ সিরিয়ান শরণার্থী এবং আশ্রয়প্রার্থীদের গ্রহণ করেছিল। যার মধ্যে জার্মানিতেই ঠাঁই পেয়েছিল পাঁচ লাখের বেশি শরণার্থী। এসব শরণার্থীদের বেশিরভাগই ২০১৬ সালের একটি চুক্তির আগে দেশগুলোতে পৌঁছেছিল। সে সময় তিন লাখ ৭০ হাজার সিরিয়ান শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য তুরস্ককে কোটি কোটি ইউরো সহায়তা দিয়েছিল ইইউ।
তবে ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের এতো হ্যাপা পোহাতে হয়নি। তাদের সঙ্গে সঙ্গেই স্বাগত জানিয়েছে ইউরোপীয় দেশগুলো। ইউক্রেনীয়দের বুদ্ধিমান, শিক্ষিত এবং উচ্চযোগ্যতা সম্পন্ন হিসেবে অভিহিত করেছেন বুলগেরিয়ার প্রধানমন্ত্রী কিরিল পেটকভ। তিনি বলেন,
এই ইউরোপীয়দের বিমানবন্দরে বোমা হামলা করা হয়েছে, যারা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ইউক্রেন থেকে আগত সবাইকে সাহায্য করবে বলে জানিয়েছে বুলগেরিয়া। ইউক্রেনে অবশ্য আড়াই লাখের জাতিগত বুলগেরিয়ান রয়েছে।
অন্যদিকে, গত বছর ৩,৮০০ সিরিয়ান শরণার্থী বুলগেরিয়াতে আশ্রয় চেয়েছিল। তাদের মধ্যে ১,৮৫০ জনকে আশ্রয় দেওয়া হয়। অবশ্য বুলগেরিয়াতে থাকার ব্যাপারে খুব বেশি আগ্রহ নেই সিরিয়ান শরণার্থীরা। বেশিরভাগ শরণার্থী বুলগেরিয়ার মধ্য দিয়ে ধনী ইইউ ধনী ইইউভুক্ত দেশগুলোতে যায়। এদিকে গত বছর বেলারুশের মধ্য দিয়ে আসা মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকান শরণার্থীদের ঢেউ ফিরিয়ে দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিল পোল্যান্ড। তবে ইউক্রেনীয়দের ক্ষেত্রে সেই পোল্যান্ডেরই ভিন্ন সুর। ইউক্রেনীয়দের শরণার্থীদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত বলেই জানিয়েছে দেশটি।
একই কথা খাটে হাঙ্গেরির ক্ষেত্রেও। ২০১৫ সালে মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়া থেকে আসা শরণার্থীর ঢেউ সামলাতে দক্ষিণাঞ্চলের সীমান্তে প্রাচীর নির্মাণ করেছিল হাঙ্গেরি। রয়টার্স বলছে সেই হাঙ্গেরিই ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের পরিবহণ, সামায়িক আশ্রয়, খাবার ও পানি দিয়ে সহায়তা করার ঘোষণা দিয়েছে।