লেখকঃ আবিদ হাসান
এরদোগান–পুতিন |
ইউক্রেন উত্তেজনার মাঝে এরদোগান পুতিনকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। কিন্তু এই আমন্ত্রণ নিয়ে হয়তো অনেকের মনে অনেক প্রশ্ন আসতে পারে যেমনঃ
এই উত্তেজনার মাঝে বৈঠক কি আসলেই হবে?
যদি হয় তাহলে কি বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে?
বা বৈঠকের সফলতাই বা কতটুক হবে?
চলুন সেই বিষয়গুলো নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক।
আমাদের ১ম প্রথম টপিক নিয়ে আলোচনা করা যাক ইউক্রেন উত্তেজনার মাঝে এরদোগানের আমন্ত্রণে পুতিন কি তুরস্কে আসবেন?
উত্তর হলো আসবেন কি আসবেন না সেটা পুরোপুরি পুতিনের নিজস্ব বিষয়। তবে হিসাব কষলে রশিয়ার এই পরিস্থিতিতে তুরস্ককে পাশে পাওয়াটা জরুরী? কেননা ইউক্রেন ইস্যুতে তুরস্ক উত্তপ্রোতভাবে জড়িত। রাশিয়া কোনো ভাবেই তুরস্ককে পাশ কাটিয়ে ইউক্রেনে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারবে না কেননা এতদিনের হিসাব করলে দেখা যাবে যে তুরস্কের একাধারে রাশিয়া, আমেরিকা ও ইরানের কৌশলগত মিত্র আবার কিছু কিছু সময় শত্রুর ভূমিকাও পালন করে। যদিও শত্রুর ভূমিকাকে তুরস্ক বলে যে দেশের স্বার্থ রক্ষায় তুরস্ক যেকোনো পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।
কিন্তু আবার এই এরদোগান প্রশাসনই রাশিয়া ও আমেরিকার সাথে মধ্যেপ্রাচ্য ও সমরিক বিষয়ে বিভিন্ন চুক্তি করেছে। বলতে গেলে দুই দেশেই তুরস্ক সফলভাবে খুঁটি স্থাপন করতে পেরেছে। একপাশে তুরস্কের যেমন ন্যাটোতে রয়েছে যথেষ্ট সৈন্য তেমনি এযাবৎকালে সেরা আকাশ প্রতিরক্ষা S400 নিয়ে পাশে রয়েছে রাশিয়া। এছাড়া রাশিয়ার S400 এর সকল চালান তুরস্ক এখনো হাতে পাইনি, সিরিয়া আর আজারবাইজানে তুরস্কের সাথে বলতে গেলে এক প্রকার শান্তিচুক্তি হয়েছে।
আবার এদিকে বার্তমান সময়ের সবচেয়ে সফল ও আলোচিত ড্রোন বাইরাক্তার টিবি—2 ইউক্রেনে সাপ্লাই দিচ্ছে তুরস্ক। এমনকি ইউক্রেনের সাথে যৌথভাবে এই ড্রোন উৎপাদনের জন্য কারখানা বানানোর কাজ চলছে।
এই বিষয়গুলো রাশিয়ার যথেষ্ট উদ্বেগের বিষয়। এছাড়া যদি যুদ্ধ বাধে তাহলে রাশিয়ায় যথেষ্ট জনসমার্থন প্রয়োজন হবে সেক্ষেত্রে ন্যাটো দেশ জার্মানি ও বেলারুশের মতো তুরস্ককেও পাশে পেতে চাইবে রাশিয়া কেননা তুরস্ক ন্যাটো জোটে দ্বিতীয় বৃহত্তম সামরিক শক্তি হিসাবে পরিচিত।
অন্যদিকে তুরস্ক রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে মধ্যস্থতার করার ব্যাপারে ও দুই দেশকে একই টেবিলে আনার জোর চেষ্টা চালাচ্ছে।
সবদিক থেকে যদি মোটামুটি একটা হিসাব করেন তাহলে পুতিন এরদোগানের আমন্ত্রণ মেনে তুরস্কে আসলেও আসতে পারেন।
এবার আসি দ্বিতীয় টপিকে যদি পুতিন তুরস্ক সফর করে তাহলে কি কি বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে?
আলোচনা তো অনেক কিছু নিয়ে হতেই পারে কিন্ত আলোচনায় সবচেয়ে বেশী প্রাধান্য পাবে ইউক্রেন নিয়ে। কেননা তুরস্ক ইউক্রেনে সামরিক ও বাণিজ্যিক নানা বিভাগে বিনিয়োগ করেছে। যদি যুদ্ধ বাধে তাহলে তুরস্ক অবশ্যই ক্ষতির সম্মুখীন হবে। আবার অন্যদিকে যুদ্ধ বাধলে মধ্যপ্রাচ্যে ও পূর্ব ভূমধ্যসাগরে প্রতিটা জায়গায় রাশিয়ার বাহিনীকে নানাভাবে চাপে ফেলার সক্ষমতা রাখে তুরস্ক। এছাড়া তুরস্ক ইউক্রেনকে যে ড্রোন সাপ্লাই দিচ্ছে ইউক্রেন তাদিয়ে ইতিমধ্যে রাশিয়া সমর্থিত বাহিনীগুলোর উপর সফলভাবে হামলা চলিয়েছে। যার ফলে তুরস্কের ওই ড্রোন নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে।
এছাড়া বর্তমানে সিরিয়ার কুর্দি ও কয়েকটি মিলিশিয়া বাহিনী তুরস্কে হামলা বাড়িয়েছে। কিছুদিন আগেও কুর্দিদের একটা হামলায় তুরস্কের দুই পুলিশ নিহত হয়েছিলো। যদিও রাশিয়া ও আমেরিকার সাথে তুরস্ক চুক্তি করেছিলো যে তারা এই বাহিনীকে তুরস্কের সীমান্ত থেকে ৩০কিলোমিটার দূরে রাখবে। তুরস্ক বলছে এক্ষেত্রে রাশিয়া বা আমেরিকা কেউ তার কথা রাখেনি। তাই তুরস্ক বলছে নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে তুরস্ক সব ধরনের ব্যবস্থা নিবে। যদিও ইউক্রেন উত্তেজনার মাধ্যে মনে হয় না তুরস্ক সিরিয়ায় কোনো অভিযানে নামবে। তবুও তুরস্ক রাশিয়ার সাথে এবিষয় নিয়ে আলোচনা করে হয়তো একটা সমাধান বের করতে চাইছে।
আর বেশ কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে যেমনঃ S400 এর পরবর্তী চালান, S500 নিয়ে আলোচনা, পারস্পরিক সম্পর্ক বাড়ানো, সামরিক সহায়তা, বাণিজ্যিক সম্পর্ক বা পর্যটন শিল্প নিয়ে আলোচনা হলেও হতে পারে।
এবার আসি পুতিনের এই সফরের সফলতাই বা কতটুক হবে?
সেক্ষেত্রে বলা যেতে পারে দুই নেতার মনোভাবের উপর সফলতা আসবে।
তাছাড়া পুতিন প্রশাসন আগেই বলেছে তারা যুদ্ধ চাইনা। আর তুরস্ক চাইছে রাশিয়া ও ইউক্রেনকে এক টেবিলে বসিয়ে মধ্যস্থতাকারী হিসাবে ভূমিকা পালন করতে একই সাথে নিজেদের কূটনৈতিক সক্ষমতা প্রদর্শন করতে। যদি তুরস্ক এই ধরণের কোনো বৈঠকে সফলতা পাই তাহলে এই ধরণের যুদ্ধ পরিস্থিতিতে অনেক দেশই তুরস্ক উপর আস্থা রাখতে পারবে।
এতে তুরস্কও এই ধরণের মধ্যস্থতায় বিভিন্ন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আদায় করতে সক্ষম হবে।
তাই সবাইকে বলব একটু অপেক্ষা করতে যে আগামীতে কি হয় বা কি ঘটতে পারে সেটা দেখার জন্য।