মুসলিমরাই প্রথম রকেট ও টর্পেডো আবিষ্কার করেন

আবিদ হাসান

প্রতিবেদনটি আপনাদের কাছে প্রমাণসহ উপস্থাপন করা হলো

চীনারা যবক্ষার থেকে বারুদ আবিষ্কার করেছিল এবং আঁতশবাজিতে বারুদ ব্যবহার করতো। কিন্তু আরবরাই প্রথম সামরিক প্রয়োজনে পটাশিয়াম নাইট্রেটের সাহায্যে বারুদ পরিশোধন করে।

চিত্রঃ রকেট ও টর্পেডো
মীর ফাতেহউল্লাহ খান হলেন বন্দুক ও বারুদের আবিষ্কারক। 'অ্যারাব সিভিলাইজেশন'-এ ড. লীবন লিখেছেন, 'Gunpowder was a great invention of the Arabs who were already using guns.' অর্থাৎ 'গোলাবারুদ হলো আরবদের একটি শ্রেষ্ঠতম আবিষ্কার। বারুদ আবিষ্কারের আগে তারা বন্দুক ব্যবহার করছিল।'

১৩৪০ সালে ফ্রাঞ্জডল আল-বাশুর অবরোধ করলে আরবরা এ শহর প্রতিরক্ষায় বন্দুক ব্যবহার করে।


'হিস্টরি অব দ্য মুরিশ এম্পায়ার ইন স্পেন'-এর লেখক স্কট আরবদের বন্দুক ব্যবহারের সত্যতা সমর্থন করেছেন। 


আরবরা প্রাথমিক যুগে পটাশিয়াম নাইট্রেটের সঙ্গে পরিচিত ছিল এবং খলিফা খালিদ ইবনে ইয়াজিদ-ও পটাশিয়াম নাইট্রেটের কথা জানতেন। তবে বিভিন্ন নামে এরসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হতো। ধাতুর কাজকর্মে একটি ফ্লাক্স হিসাবে এবং নাইট্রিট এসিড ও একোয়া রিজিয়া তৈরিতে তা কাজে লাগানো হতো। জাবির ইবনে হাইয়ান, আবু বকর আল-রাজি ও অন্যান্য আরব রসায়নবিদের রচনাবলীতে এ রসায়নিক পদার্থ ব্যবহারের রেসিপি খুঁজে পাওয়া গেছে। আরবরাই প্রথম সন্টপিটারকে পরিশোধন করে অস্ত্র তৈরির মানে উন্নীত করে। 

১০২৯ সালে ইবনে বখতাওয়ারের 'আল-মুদ্দাদিমা'য় অস্ত্র উৎপাদনের উদ্দেশ্যে সল্টপিটার পরিশোধন করার বর্ণনা দেয়া হয়েছে। ১২৭০ সালে সিরীয় সামরিক প্রকৌশলী ও রসায়নবিদ হাসান আল-রাম্মাহ তার 'আল-ফুরুসিয়া ওয়া আল-মানাসিব আল হারবিয়া'য় (The Book of Military Horsemanship and ingenious war devices) বিস্ফোরক বারুদ ও বারুদের ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি প্রথম পটাশিয়াম নাইট্রেট পরিশোধন করার প্রক্রিয়া বর্ণনা করেন। এছাড়া তিনি পটাশিয়াম নাইট্রেট থেকে ক্যালশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম সল্ট অপসারণে পটাশিয়াম কার্বোনেট ব্যবহারের কথা উল্লেখ করেছেন ১২৭০-৮০ সালের মধ্যে তিনি বইটি লিখেছিলেন। বইটিতে ১০৭ প্রকারের বারুদ তৈরির বর্ণনা দেয়া হয়েছে। রকেট তৈরির বর্ণনা দেয়া হয়েছে ২২টি রেসিপিতে। আধুনিক বৈজ্ঞানিক হিসাব অনুযায়ী বারুদ তৈরির জন্য প্রয়োজন ৭৫ শতাংশ পটাশিয়াম নাইট্রেট, ১০ শতাংশ সালফার এবং ১৫ শতাংশ কার্বন হাসান আল রাম্মাহর রেসিপিতে ছিল ৭৫ শতাংশ পটাশিয়াম নাইট্রেট, ৯ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ সালফার এবং ১৫ দশমিক ৯৪ শতাংশ কার্বন।


১২৬০ সালে মিসরীয় সৈন্যরা তাতার সৈন্যদের বিরুদ্ধে আইন জালুতের যুদ্ধে ইতিহাসে প্রথম কামান থেকে গোলা ছুঁড়ে। স্পেনের আল-আন্দালুসে মুসলমানরা খ্রিস্টান ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একইভাবে কামান ব্যবহার করে। অগ্নিউদগীরণকারী মুসলিম অস্ত্রগুলো ক্রুসেডারদের ভীত করে তোলে। পঞ্চদশ শতাব্দীতে আরবরা রকেট ও টর্পেডো দু'টিই আবিষ্কার করে। রকেটকে বলা হতো ‘তায়ার বুরাক’ বা ‘স্বয়ংক্রিয় ও জলন্ত ডিম। আরবদের উদ্ভাবিত টর্পেডো ছিল সামনে বর্শা সজ্জ্বিত নাশপাতির আকৃতি বিশিষ্ট একটি স্বয়ংক্রিয় বোমা। বোমাটি শত্রু জাহাজ ভেদ করে ভেতরে ঢুকে গিয়ে বিস্ফারিত হতো।

টর্পেডো আবিষ্কারে মুসলমানদের কৃতিত্বের স্বীকৃতি দিয়ে 'এনশিয়েন্ট ডিসকভারি, এপিসোড টুয়েলভ মেশিন অব দ্য ইস্ট'-এ বলা হয়, 'One of the most significant inventions in medieval warfare was the torpedo, invented in Syria by the Arab inventor Hassan al-Rammah in 1275. His torpedo ran in water with a rocket system filled with explosive gunpowder meterials and had three firing points. It was a very effective weapon against ships..

অর্থাৎ 'টর্পেডো ছিল মধ্যযুগের যুদ্ধে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ একটি আবিষ্কার। ১২৭৫ সালে আরব আবিষ্কারক হাসান আল-রাম্মাহ সিরিয়াতে টর্পেডো উদ্ভাবন করেন। তার উদ্ভাবিত টর্পেডো বিস্ফোরক গোলাবারুদ পূর্ণ একটি রকেট নিয়ে পানির ভেতর ছুটে যেতো এবং তাতে ছিল গোলা বের হওয়ার তিনটি ছিদ্র। যুদ্ধজাহাজের বিরুদ্ধে এ অস্ত্র ছিল অত্যন্ত কার্যকর।


২০১১ সালে ওয়ার্ল্ড ডিসকভারি চ্যানেলে জেমি হ্যানিম্যান এবং এডাম স্যাভেজ আরব বিজ্ঞানী রাম্মাহর উদ্ভাবিত টর্পেডোর একটি নমুনা তৈরি করেন এবং কয়েক বার চেষ্টার পর নমুনাটি ছুঁড়তে সক্ষম হন। অস্ত্রটিকে তারা বিশ্বস্ত হিসাবে দেখতে পান। এসব মারণাস্ত্র ব্যবহারের ফলাফল হয়েছিল বিস্ময়কর। কিন্তু মুসলমানদের দুর্ভাগ্য। এ প্রযুক্তি স্পেনের খ্রিস্টানদের কাছে হস্তান্তরিত হয় এবং মুসলমানদের সঙ্গে শেষ লড়াইয়ে ক্রুসেডাররা কামান ব্যবহার করে। স্পেনের খ্রিস্টানদের কাছ থেকে এ প্রযুক্তি পশ্চিম ইউরোপে গিয়ে পৌঁছে। ১৩৪২-৪৫ সালে ডারবি ও সলিসবেরির আলগণ আল-জাজিরা অবরোধে অংশগ্রহণ করেন এবং তারা গোলাবারুদ ও কামান তৈরির রহস্য ইংল্যান্ডে নিয়ে যান। তার মাত্র দু'এক বছর পর ১৩৪৬ সালে পশ্চিম ইউরোপে ক্রিসির যুদ্ধে ফরাসিদের বিরুদ্ধে ইংরেজরা কামান ব্যবহার করে।

ইউরোপীয়রা আতশবাজি তৈরি করতে জানতো না। মুসলমানদের কাছ থেকে তারা এ জ্ঞান লাভ করে। একজন ফরাসি বৈরুতে এসে লোকজনকে আতশবাজি করতে দেখেন। এ ফরাসির নাম ছিল বারট্রানডন দ্য লা ব্রকিয়েরি। ১৪৪২ সালে ব্রকিয়েরি ভ্রমণকারীর ছদ্মবেশে জেরুজালেম ও তুরস্কের আনাতোলিয়া সফর করেন। ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি 'লা ভয়েজ ডি'কোত্রি-মার' শিরোনামে একটি গ্রন্থ লিখেছিলেন। বারগুন্ডির ডিউকের নেতৃত্বে আরেকটি ক্রুসেড পরিচালনা করার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে তিনি ইসলামী দেশগুলো সফর করছিলেন। তিনি ছিলেন একজন দক্ষ গুপ্তচর এবং অত্যন্ত সূক্ষ্ণদর্শী পর্যটক। ব্রকিয়েরি তার যাত্রাপথের সবকিছু খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতেন। বর্তমান লেবাননের রাজধানী বৈরুতে এসে তিনি স্থানীয় অধিবাসীদের ঈদ উদযাপন করতে দেখতে পান। লোকজন ঈদের আনন্দে আতশবাজি করছিল। জীবনে তিনি প্রথমবার আতশবাজি দেখেন। তিনি যুদ্ধে বারুদের সম্ভাব্য গুরুত্ব অনুধাবনে সক্ষম হন এবং ঘুষ দিয়ে বারুদের ব্যবহার শিখে নেন। ব্রকিয়েরি তার এ ধারণা ফ্রান্সে নিয়ে যান।

এভাবে ইউরোপ বা পাশ্চাত্যের বর্তমান পরাশক্তিরা মুসলিমদের কাছ থেকে চুরি করা প্রযুক্তি নিয়ে আজ তারা বিশ্বের নেতা বনে গেছে আর যখন মুসলিমরা ঘুমিয়ে সময় পারকরছিল তখন তারা ওই প্রযুক্তি আরও উন্নত করে মুসলিমদের উপরই ব্যবহার করছে। 

Previous Post Next Post