MrJazsohanisharma

তালেবানের পর্যায়ক্রমিক উত্থান ও কাবুল দখল

আবিদ হাসান

কাবুলের সিংহাসন থেকে তালেবানকে হটানো হয়েছিল ২০০১ সালে। দীর্ঘ ২০ বছর আগ্রাসনের পর যুক্তরাষ্ট্র দেশটি থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। আবারও দৃশ্যপটে তালেবান। ক্ষমতা বুঝে নেওয়ার অপেক্ষায় আছে তারা।

২০০১ থেকে ২০২১ পর্যন্ত এক নজরে দেখে নিন আফগানিস্তানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু সময়ঃ


চিত্রঃ তালেবানের সংবাদ সম্মেলন


২০০১ থেকে ২০০৩ সালঃ

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আমেরিকায় হামলার প্রতিক্রিয়ায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ‘ওয়ার অন টেরর’ শিরোনামে সে বছরের ৮ অক্টোবর আফগানিস্তানে অভিযান শুরু করেন।

এ হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ওসামা বিন লাদেন ও আল কায়েদাকে আশ্রয় দেয় তালেবান সরকার। প্রবল আক্রমণের মুখে ১৯৯৬ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা তালেবান সে বছরের ৬ ডিসেম্বর কাবুল ছেড়ে যায়। এর পর হামিদ কারজাই অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে নিযুক্ত হন এবং ন্যাটো তার আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সহায়তা বাহিনী মোতায়েন শুরু করে।

২০০৪ সাল থেকে ২০০৫ সালঃ

নতুন পদ্ধতিতে ২০০৪ সালে আফগানিস্তানে প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ৭০ শতাংশ ভোট পড়ে। এর মধ্যে ৫৫ শতাংশ ভোট পান হামিদ কারজাই।
এ বছরই দেশের দক্ষিণ ও পূর্বের অংশের পাশাপাশি পাকিস্তানের সীমান্ত পেরিয়ে তালেবান পুনরায় সংগঠিত হয় এবং বিদ্রোহ শুরু করে।

২০০৮ সাল থেকে ২০১১ সালঃ

হামলা বেড়ে যাওয়ার মধ্যে মার্কিন কমান্ডের অনুরোধে দেশটিতে আরও সেনা মোতায়েন করা হয়। তালেবানের হামলা, ভোট জালিয়াতির মধ্যে ২০০৯ সালের ২০ আগস্টের নির্বাচনে ফের হামিদ কারজাই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

২০০৯ সালে আফগান যুদ্ধের অবসান ঘটাবেন বলে প্রচার চালানো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা দেশটিতে সেনা মোতায়েন বাড়িয়ে দেন। এতে সেনা সংখ্যা গিয়ে পৌঁছায় ৬৮ হাজারে। ২০১০ সালে যা এক লাখের কাছাকাছি পৌঁছে যায়। ২০১১ সালের ২ মে যুক্তরাষ্ট্রের স্পেশাল ফোর্স পাকিস্তানে ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করে। একই বছরের ২২ জুন বারাক ওবামা সেনা প্রত্যাহার শুরুর ঘোষণা দেন। এর পর ২০১২ সালের মাঝামাঝিতে ৩৩ হাজার সেনা প্রত্যাহার করা হয়।

২০১৪ সাল থেকে ২০১৯ সালঃ

২০১৪ সালের জুনে আশরাফ ঘানি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

সে বছরের ডিসেম্বরে ন্যাটো তার মিশন সমাপ্ত করে। তবে আফগান সেনাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য কিছুসংখ্যক সেনা দেশটিতে থেকে যায়। পরের বছর, ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে তালেবানরা তাদের সবচেয়ে বড় সামরিক অগ্রগতি অর্জন করে। ইসলামিক স্টেট গ্রুপও দেশটিতে সক্রিয় হতে শুরু করে। কাবুলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ হামলা চালায় জঙ্গিগোষ্ঠীটি।

২০২০সালঃ যুক্তরাষ্ট্র-তালেবানচুক্তি এবং বিতর্কিত নির্বাচন

২০২০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি আশরাফ ঘানি দ্বিতীয়বারের মতো নিজেকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা দেন।এ ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করেন তার প্রতিপক্ষ এবং সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ। ২৯ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র এবং তালেবান কাতারের রাজধানী দোহায় ঐতিহাসিক চুক্তি সই করে। সেখানে ২০২১ সালের মে মাসের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সব বিদেশি সেনা প্রত্যাহার করার কথা বলা হয়।  ক্ষমতা ভাগাভাগির চুক্তি মে মাসে ঘানি-আবদুল্লাহর দ্বন্দ্বের অবসান ঘটায়। আবদুল্লাহ শান্তি আলোচনায় নেতৃত্বে আসেন। এর পর সেপ্টেম্বরে আলোচনা শুরুর মধ্যে দেশটিতে সহিংসতা বাড়তে থাকে। এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তালেবানকে অভিযুক্ত করা হয়।

২০২১ সালঃ

মে: বিদেশি সেনা প্রত্যাহার

১ মে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটো ৯ হাজার ৫০০ সেনা প্রত্যাহার শুরু করে। এর মধ্যে দুই হাজার ৫০০ সেনা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের। মে মাসেই যুক্তরাষ্ট্র কান্দাহার বিমানঘাঁটি থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেয়। ২ জুলাই বাগরাম ঘাঁটি থেকেও সেনা প্রত্যাহার করা হয়। এর পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাইডেন ঘোষণা দেন ৩১ আগস্টের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সব সেনা প্রত্যাহার করা হবে।

মে থেকে আগস্ট: তালেবানের অগ্রযাত্রা

মে মাস থেকে আফগানিস্তানজুড়ে হামলা বাড়িয়ে দেয় তালেবান। দখল করে নেয় একের পর এক এলাকা। ৬ আগস্ট প্রথম প্রাদেশিক রাজধানী জারাঞ্জ দখলে নেয় গোষ্ঠীটি। এর পর ১৩ আগস্টের মধ্যে উত্তর, পশ্চিম ও দক্ষিণের অধিকাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেয় তালেবান।

১৫ আগস্ট তালেবান কাবুল ঘিরে ফেলে

আশরাফ ঘানি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। তালেবান দেশটির প্রেসিডেন্ট প্যালেস দখলে নেয়। এক বিবৃতিতে আশরাফ ঘানি তালেবানের ‘জয়’ মেনে নেন।

[ বিদ্রুপঃ লেখাটি যুগান্তর থেকে সংগৃহীত ]

Previous Post Next Post