মূল লেখকঃ ডার্ক ল্যাব
সংগৃহীতঃ দ্যা ব্ল্যাক হ্যাট ম্যাগাজিন
 |
চিত্রঃ Cloud Computing |
ক্লাউড কম্পিউটিং কিঃ
ক্লাউড কম্পিউটিং হল আপনার বিভিন্ন সার্ভিস সমৃদ্ধ একটি সার্ভার বা নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাপনা যা ব্যবহার করার জন্য আপনার নির্দিষ্ট কোন স্থান বা সময়ের দরকার নাই । অর্থাৎ আপনার সেই সার্ভার বা নেটওয়ার্কটি আপনি রিমোটলি এক্সেস করতে পারবেন। ধরুন আপনার বাসার একটি পিসিতে আপনি লিনাক্স সেটআপ করেছেন, এখন হঠাৎ অফিসে এসে আপনার মনে পড়লো এই লিনাক্স পিসিতে আপনার একটি কাজ করতে হবে, তাহলে সাধারণ অবস্থায় আমরা এটা করতে পারিনা। কিন্তু আপনার এই লিনাক্স পিসি যদি ক্লাউড কম্পিউটিং এর অন্তর্ভুক্ত হতো তাহলে এই পিসিটি অ্যাক্সেস করা আপনার জন্য কোন ব্যাপারই নয়। শুধু একটি সাধারণ মানের কম্পিউটার আর ইন্টারনেট থাকলেই চলবে। শুধু কম্পিউটার কেন ? এখন চাইলে আপনি মোবাইল বা ট্যাব থেকেও ওই সার্ভারটি চালাতে পারবেন। তার জন্য দরকার শুধু ইন্টারনেট। খুব সাধারণ ভাবে বললে এই সিস্টেমটিই হল ক্লাউড কম্পিউটিং
ক্লাউড কম্পিউটিং এর ইতিহাসঃ
ক্লাউড কম্পিউটিং এর ইতিহাস খুব বেশি আগের নয়। ১৯৫০ সালের দিকে কিছু বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম এই বিষয়টা নিয়ে গবেষণা শুরু হয়। আর ১৯৯০ সালের দিকে জন ম্যাকক্যাথি একটি ধারনা দেন। তার মতে "Computation may someday be organized as a public utility" অর্থাৎ “কম্পিউটেশন একদিন সংগঠিত হবে পাবলিক ইউটিলিটি হিসেবে। তবে ১৯৯০ সালের দিকে এই ধারনা একটি অবস্থানে পৌঁছায়। তখন টেলিকমিউনিকেশন প্রতিষ্ঠান সমূহ ঘোষণা দেয় পয়েন্ট টু পয়েন্ট ডেটা সার্কিট এর, যা ভিপিএন (ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক) নামে পরিচিত ক্লাউড কম্পিউটিং এর জন্য ২০০০ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। Real Time Cloud Computing মূলত এই সময় শুরু dot com bubble এর পর amazon সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করে ক্লাউড কম্পিউটিং প্রচাররের জন্য। ২০০৮ সালের শুরুতে Eucalyptus Open Source Aws (Amazon Web Services ) - API Compatible Platform চালু করে। তবে বর্তমানে ক্লাউড কম্পিউটিং এর ভিত্তি অত্যন্ত জোরালো এবং অনেক সার্ভিস এই ক্লাউড কম্পিউটিং এর সাথে যুক্ত হয়। প্রতিনিয়ত এই ক্লাউড কম্পিউটিং এগিয়ে যাচ্ছে এক অভাবনীয় সাফল্যের দিকে আর সাথে থাকছে তাক লাগানো সব সার্ভিস।

ক্লাউড কম্পিউটিং এর ধরনঃ
ক্লাউড কম্পিউটিং সাধারণত ২ ধরনের হয়।
১। পাবলিক ক্লাউড
২। প্রাইভেট ক্লাউড
পাবলিক ক্লাউডঃ পাবলিক ক্লাউড হল এমন একটি ক্লাউড কম্পিউটিং সার্ভার যার সার্ভিসগুলো Publicly Available.
প্রাইভেট ক্লাউডঃ প্রাইভেট ক্লাউড হল এমন একটি ক্লাউড কম্পিউটিং সার্ভার যার সার্ভিসগুলো Publicly Available নয়। অর্থাৎ ওই সার্ভারের সার্ভিসগুলো শুধু মাত্র নির্দিষ্ট অর্গান হিজেশন জন্যই সীমাবদ্ধ।
এছাড়াও আর দুইটি প্রকার রয়েছে যা মূলত উপরের দুইটি থেকেই এসেছে, আর তা হল, হাইব্রিড ক্লাউড এবং কমিউনিটি ক্লাউড। যেই ক্লাউড কম্পিউটিং-টি তৈরি হয় পাবলিক ও প্রাইভেট ক্লাউড নিয়ে তাকে বলা হয় হাইব্রিড ক্লাউড এবং যেই ক্লাউড কম্পি উটিংটি তৈরি হয় একাধিক অর্গানাইজেশনের জন্য তাকে বলা হয় কমিউনিটি ক্লাউড
ক্লাউড কম্পিউটিং এর মডেলঃ
ক্লাউড কম্পিউটিং এর বেশ কিছু মডেল রয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে প্রধানত তিনটি মডেলই মূল
১। ইনফ্রাস্ট্রাকচার এক্স সার্ভিস (laaS)
২। প্ল্যাটফর্ম এজ এ সার্ভিস (PaaS)
৩। সফটওয়্যার এজ এ সার্ভিস (SaaS)
ইনফ্রাস্ট্রাকচার এজ এ সার্ভিস (laas):
ইনফ্রাস্ট্রাকচার এজ এ সার্ভিস (laaS) এর মাধ্যমে একজন ক্লায়েন্ট তার সার্ভিস প্রোভাইডারের কাছ থাকে শুধু মাত্র ইনফ্রাস্ট্রাকচার ভাড়া নিবে এরপর ক্লায়েন্ট তার ইচ্ছা মতন OS, Application সেটআপ বা কনফিগার করতে পারবে।
প্ল্যাটফর্ম এজ এ সার্ভিস (PaaS) :
প্ল্যাটফর্ম এজ এ সার্ভিস (Paas) এর মাধ্যমে একজন ক্লায়েন্ট তার সার্ভিস প্রোভাইডারের কাছ থেকে এমন একটি সার্ভিস ভাড়া নিবেন যেখানে আগে থেকেই কিছু সার্ভিস দেওয়া থাকবে। যেমনঃ অপারেটিং সিস্টেম, ডাটাবেস, প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ এক্সিকিউশন সিস্টেম ইত্যাদি ।
সফটওয়্যার এজ এ সার্ভিস (Saas) :
সফটওয়্যার এজ এ সার্ভিস (SaaS) এর মাধ্যমে একজন ক্লায়েন্ট তার সার্ভিস প্রোভাইডারের কাছ থেকে এক বা একাধিক এপ্লিকেশন ভাড়া নিবেন। এছাড়া আরও যে কয়টি মডেল আছে তা হলঃ
● Storage as a service ( STaaS)
● Security as a service (SECaaS) Data as a service (DaaS)
● Test environment as a service (TEaaS)
● Desktop as a service (DaaS)
● APl as a service (APlaaS)
ক্লাউড কম্পিউটিং এর বিস্তারিতঃ এরই মধ্যে আমরা ক্লাউড কম্পিউটিং সম্পর্কে বেশ কিছু ধারণা পেয়েছি। এখন আমরা এই ক্লাউড কম্পিউটিং নিয়ে আরও একটু বিস্তারিত জানব একটি উদাহরণের মাধ্যমে। ক্লাউড কম্পিউটিং এর সার্ভিস প্রদান করে এমন কোন সার্ভিস প্রদানকারীর কাছ থেকে আমরা এই সুবিধা নিতে পারি। তবে আমরা যে এমন একটি ক্লাউড কম্পিউটিং সিস্টেম তৈরি করতে পারব না ব্যাপারটা তা নয়। কিন্তু এর মধ্যে বেশ কিছু ইস্যু চলে আসে, যেমনা পাওয়ার সিস্টেম, ডাটা ব্যাকআপ, ডাটা সমন্বয়, নিরাপত্তা ইত্যাদি। এই ব্যাপারগুলো নিশ্চিত হলে অদূর ভবিষ্যতে হয়ত আমাদের দেশ থেকেই বিস্তর পরিসরে এই সার্ভিস দেওয়া সম্ভব। তবে বর্তমানে USA, UK, CANADA, AUSTRALIA ইত্যাদি দেশের বেশ কিছু বিখ্যাত এবং নতুন কিছু কোম্পানি এই ক্লাউড কম্পিউটিং সার্ভিস প্রদান করছে। ধরুন একটি আউটসোর্সিং ফার্ম, যাদের কাজ হল Image Processing 2D & 3D এনিমেশন, Auto CAD, Revit, 3D max Rendering ইত্যাদি নিয়ে কাজ করা। সেক্ষেত্রে image ProcessingG, Photoshope Auto CADএর জন্য আমরা 13 Processor, 4-8 GB RAM ই যথেষ্ট। কিন্তু যদি আপনি 3D Animation বা 3D max Rendering করতে চান সেক্ষেত্রে আপনাকে অনেক High Configuration এর একটি PC লাগবে। এর জন্য 17 Processor, 8-16 GB RAM হলে ভালো হয়। এখন ধরুন আপনার কাছে ১০টি 13 মানের কম্পিউটার এবং ২টি 17 মানের কম্পিউটার আছে। আপনার ফার্মে সাধারণত Image Processing এবং Auto CAD এর কাজই বেশী হয় কিন্তু হঠাৎ করে আপনি অতিরিক্ত বেশ কিছু 3D max Rendering এর কাজের অফার পেলেন । আর অতিরিক্ত ওই কাজের জন্য আপনার ২টি High Configuration পিসি যথেষ্ট নয়। আপনার আরও একটি High Configuration এর পিসি সরকার । একটু ভাবুনতো তখন আপনি কি করবেন? হয়ত কাজের প্রয়োজনে আপনি তখন আরও একটি High Con figuration এর পিসি কিনবেন। কিন্তু কাজ শেষ হয়ে গেলে এই পিসিটি আপনার আর দরকার হবেনা। অর্থাৎ পরবর্তী কাজ আসার আগ পর্যন্ত আপনার এই High Configuration এর পিসিটির Proper Utilization হচ্ছেনা। আর এখানেই হল ক্লাউড কম্পিউটিং এর সুবিধা। এই ধরনের পরিস্থিতিতে ক্লাউড কম্পিউটিং-ই আপনাকে দিতে পারে আসল সমাধান। সেক্ষেত্রে আপনি আপনার প্রয়োজনীয় এর একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ভাড়া নিতে পারেন অথবা আপনার ক্লাউড সার্ভারে আগে থেকেই যে ভাড়া নেওয়া আছে তার থেকেই একটি নতুন পিসি তৈরি করা এবং কাজ শেষে আবার আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়া। নিচের এই ছবিটি একটি রিয়েল ক্লাউড সার্ভারের ছবি।

এখানে আপনারা দেখতে পাচ্ছেন এখানে ২টি সার্ভার বানানো হয়েছে। এখন আপনি চাইলে এই ২টি সার্ভার থাকে আমার নির্দিষ্ট রিসোর্সের মধ্যে থাকে ৪টি সার্ভারও বানাতে পারেন আবার এই ২টি সার্ভারের রিসোর্স এক করে একটি শক্তিশালী সার্ভারও বানাতে পারেন।
পরিশেষে বলা যায়, সেই দিন হয়তো আর খুব বেশী দূরে নয় যখন দেখা যাবে যে আপনার হাতের ছোট্ট মোবাইল থেকেই আপনি ক্লাউড কম্পিউটিং এর মাধ্যমে আপনার সার্ভারে ব্যাকটাক বা কালি লিনাক্স সেটআপ দিচ্ছেন ।